• Healthcare Product

শীতের আগেই শীতের প্রস্তুতি

by osudpotro | Dec 04, 2022 08:02 am

শীতের আগেই শীতের প্রস্তুতি

শীত বাংলা সনের পঞ্চম ঋতু। পৌষ ও মাঘ মাস এই দুই মাস মিলে শীতকাল। শীতকাল প্রধানত শুষ্ক এবং দিনের তুলনায় রাত হয় দীর্ঘ হয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শীতকাল হলেও বাস্তবে নভেম্বর থেকেই হালকা শীত অনুভূত হয়। জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ১১°সেলসিয়াস থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চলে ২০°-২১°সেলসিয়াস পর্যন্ত বজায় থাকে ।

 

শীতকালে বিভিন্ন রোগ ও তার প্রতিকার?

  • শীতে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিসহ নানা রোগে খুব সহজেই আক্রান্ত হয়, সেহেতু তাদের এই সময়টাতে শীত উপযোগী কাপড় পরিধান করাতে হবে। গরম কাপড় দিয়ে শিশুদের মাথা ঢেকে রাখলে শরীরের সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকবে। রুম হিটার ব্যবহার করতে পারেন। তবে লম্বা সময় ধরে রুম হিটার ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। সম্ভব হলে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ঘর থেকে বাইরে বের না করাই উত্তম।
  • শিশুদের অ্যাজমা প্রতিরোধে অবশ্যই ধুলোবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। দৈনন্দিন ব্যবহার্য জামাকাপড় নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। শীতবস্ত্র,লেপ-তোশক নিয়মিত রোদে দিতে হবে। কোনো কারণে অ্যাজমা পরিস্থিতির অবনতি হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
  • ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হলে অবশ্যই শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। শীত বলে ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে অনেকে এ সময় শিশুদের স্যালাইন খাওয়াতে চান না, যা মোটেই ঠিক নয়। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক খাবারও খাওয়াতে হবে।
  • শীতে বিশেষ করে বয়স্কদের আর্থ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা বেশি বাড়ে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস,এনকাইলোজিং স্পন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, অস্টিও- আর্থ্রাইটিস রোগীদের শীতের চলাফেরা বা মুভমেন্ট কম হয় বলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যায়। এ জন্য যথাসম্ভব গরম উত্তাপে থাকা, মোজা পরিধান করা, ব্যথার স্থানে হালকা গরম সেক দেয়া, যতটুকু সম্ভব ঘরেই হালকা মুভমেন্ট করা উচিত। তাছাড়া তীব্র ঠাণ্ডায় বাতের কিছু রোগীর হাত-পা নীল হয়ে যেতে পারে(রেনোড ফেনোমেনা) । অনেকের গ্যাংগ্রিনও হয়। এ জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। এসব রোগীর বারবার পানি ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
  • শীতে বিশেষ করে ভোরের দিকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ঝুঁকি বেশি। তাই এই শীতে কুয়াশার মধ্যে না হেঁটে, একটু রোদ উঠলে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা উচিত। তীব্র শীতের আরেকটি মারাত্মক সমস্যা হলো হাইপোথার্মিয়া, এতে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কেউ পড়লে রোগীকে দ্রুত গরম আবহাওয়ায় এনে গরম কাপড় পরিধান করে গরম পানি পান করাতে হবে।
  • তাই শীতের তীব্রতায় এসব শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজন একটু বাড়তি সতর্কতা। এ সময় সবার উচিত কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা। এতে শ্বাসনালিতে মিউকাস তৈরি হয়ে রোগজীবাণু বের হয়ে যায়। এ ছাড়া গোসল ও অন্যান্য কাজে গরম পানি ব্যবহার করাই উত্তম। পরিবারের কেউ ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্যদেরও সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল ব্যবহার করতে হবে।

শীতকালে সুস্থ থাকার কিছু উপায়-

  • শীতকালে জলবায়ু রুক্ষ ও শুষ্ক হওয়ায় কারণে আমাদের ত্বক ফাটে। তাই ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত ৫ থেকে ৬ লিটার পানি পান করা উচিত।
  • বিভিন্ন কমল পানীয় পরিহার করে ভেষজ চা পান করুন। ভেষজ চা স্নায়ুকে শান্ত রাখে এবং শরীরকে শিথিল করে। এর ফলে হতাশা, উদ্বেগ অনেক অংশে কমে ও রাতে ভালো ঘুম হয়।
  • বেশি পরিমাণ ফাইবার যুক্ত খাবার খান। আপেল, ওটস এবং বাদাম ফাইবার যুক্ত খাবার। এগুলো শরীরের ওজন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে এবং তার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, লেবু জাতীয় ফল এবং জিঙ্ক জাতীয় খাবার খান। এই খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • শীতকালীন খাবার হিসেবে মাশরুম খান। এতে ভিটামিন বি, সি, ডি এবং ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, মিনারেল, আরগোথিওনিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • শীতের সময় ডায়েটে রাখুন প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি। এগুলোতে থাকা পুষ্টি আমাদের সুস্থ রাখে।
  • শীতকালে প্রতিদিন শরীর চর্চা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং আপনার বিপাক, রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে।

 

ত্বকের যত্ন:

 

এ সময়ে বিভিন্ন রকমের বিউটি ওয়েল বা সৌন্দর্যবর্ধক তেল ব্যবহারে ত্বকে আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় থাকে। এতে লোমকূপ থেকে ময়লা দূর হয়, দাগ কমে ও উজ্জ্বলতা বাড়ে।অলিভ অয়েল ও বাদাম তেলের মতো বিভিন্ন তেলের পাশাপাশি বেছে নিন ভালো মানের গ্লিসারিন ও ময়শ্চারাইজ সমৃদ্ধ লোশন। এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যতবার ত্বক শুষ্ক মনে হবে ততবার ব্যবহার করুন। গোসলের পর ও প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও শীতে অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। রোদ উঠলে বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

 

 

ঠোঁটের যত্ন:

 

শীতে জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। মধু ও পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রেখে দিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এরপর পরিষ্কার তুলা দিয়ে আস্তে আস্তে তুলে ফেলুন, এতে ঠোঁট কোমল হবে। ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করুন। তিলের তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে। গ্লিসারিন ও অলিভ অয়েলমিশিয়ে ঠোঁটে লাগালেও তা ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। চালের গুঁড়ার সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এতে ঠোঁটের মরা চামড়াগুলো উঠে আসে।

চুলের যত্ন:

 

চুলের রুক্ষ ভাব দূর করতে নিয়মিত তেল মাখতে হবে। তবে চুলে তেল দিয়ে বাইরে বের হলে এতে আরও বেশি ময়লা জমবে চুলে। বাইরে বের হলে চুল ভালোমতো বেঁধে ও ঢেকে রাখতে হবে। অন্যদিকে তৈলাক্ত মাথার ত্বকে লুকিয়ে থাকে খুশকির প্রাদুর্ভাব। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে মৌরি ও সমপরিমাণ পানি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভালোমতো বেটে মাথার ত্বকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া আরও একটি কাজ করতে পারেন। সেটি হলো- ইয়োগার্ট, লেবু ও ভিনিগার একটি পাত্রে ইয়োগার্ট নিন। সঙ্গে আপেল সিডার ভিনিগার ও লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে মাথার তালু এবং চুলে লাগিয়ে নিন। আধঘণ্টা রেখে দেওয়ার পর শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন। সময় পেলেই সপ্তাহের যে কনো দিন চুলে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট ও হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে তেল লাগান। শীতের সময় চুল ধুতে হবে নিয়মিত। এ সময় বাইরে অনেক বেশি ধুলাবালু উড়ে বলে রোজ চুল পরিষ্কার করা উচিত।

 

স্বাস্থ্যের যত্ন:

 

শীতে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ খানিকটা কমে যায়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে সর্দি, কাশি, পেটে সমস্যা, জ্বর, ঠাণ্ডাজনিত গলাব্যথা এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া তৃষ্ণা কম লাগায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত স্যুপ ও জুস জাতীয় খাবার খান । শীতকালে গরম চা, কফি ও অ্যালকোহল বেশ লোভনীয় পানীয়। এগুলো শরীর আর্দ্রতাশূন্য করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ত্বকের যত্নে প্রথমেই পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শ দেন। শীতকালে ব্যায়ামের পর বা অন্য সময়েও হালকা গরম পানি বা কোমল পানীয় পান করুন। যা ঠান্ডা পানির চেয়ে শরীর দ্রুত শুষে নেয়। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার। টাটকা ফল ও সবজিতে আছে বায়োটিন, যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে। এটি আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করবে।

শীতকালে কোন ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?

  • শীতের এ সময় মিষ্টি খাবার যেমন- কেক, সিরিয়াল, বাজারজাত জুস, কোমল পানীয়, উচ্চমাত্রার চিনি দিয়ে তৈরি খাবার বেশি খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
  • ইতালিয়ান পাস্তা যদিও খেতে সুস্বাদু কিন্তু শীতের সময় এ খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এই খাবারগুলো অতিরিক্ত কফ তৈরি করে।
  • শীতের সময় সব ধরনের ভাজা খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের খাবারে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট থাকে।
  • শীতে অসুস্থতা এড়াতে হিস্টামিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের খাবারের মধ্যে ডিম, মাশরুম, টমেটো, শুকনো ফল, দই উল্লেখযোগ্য। এসব খাবার শীতের দিনে অতিরিক্ত কফ তৈরি করে।
  • বুকে কফ জমলে, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি হলে শীতের সময় চিকিৎসকরা দুগ্ধ জাতীয় খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এসব খাবার খেলে বুকে কফ জমার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়।

 

সারসংক্ষেপ:

 

শীতের তীব্রতায় এসব শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজন একটু বাড়তি সতর্কতা। এ সময় সবার উচিত কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা। এতে শ্বাসনালিতে মিউকাস তৈরি হয়ে রোগজীবাণু বের হয়ে যায়। এ ছাড়া গোসল ও অন্যান্য কাজে গরম পানি ব্যবহার করাই উত্তম।